1. admin@dainikgoyendarchokh.com : goyadmin :
গাইবান্ধায় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের প্রায় ৮০ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ - দৈনিক গোয়েন্দার চোখ
বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫, ০৬:৩০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

গাইবান্ধায় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের প্রায় ৮০ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ

  • প্রকাশিত: রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৬৭ বার শেয়ার হয়েছে

ফয়সাল রহমান জনি, গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি : গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি যান্ত্রিকীকরণ উন্নয়ন সহায়তা (ভর্তুকি) প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রায় ৮০ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।

২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ উন্নয়ন সহায়তা (ভর্তুকি) প্রকল্পের আওতায় গাইবান্ধার ৭ উপজেলায় ১৪৫টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, পাওয়ার রিপার, পাওয়ার থ্রেসার ইত্যাদি কৃষি যন্ত্রপাতি ৫০-৭০ (ক্ষেত্রভেদে) ভাগ সরকারী ভর্তুকিতে বিতরণ করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৮০ কোটি টাকা। এসব যন্ত্রপাতি বিতরণের ক্ষেত্রে জাতীয় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নীতিমালা-২০২০ এর উপধারা ১.২ ও ২.৩ (১) পাশ কাটিয়ে সঠিক যাচাই বাছাই না করে এমন কিছু ব্যক্তিকে প্রদান করা হয়েছে যারা প্রকৃত কৃষক নয়।

অভিযোগ রয়েছে, কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ অন্যান্য কৃষি যন্ত্রপাতির এলাকায় ব্যাপক চাহিদা থাকায় একই ব্যক্তির নামে ২টি কৃষিযন্ত্র দেখিয়ে এবং রাজনৈতিক কর্মী, ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে ও তাদের সাথে যোগসাজস করে সুকৌশলে ওই সব যন্ত্রপাতি প্রদান দেখিয়ে ভূর্তকীর সরকারী টাকা ভাগাভাগি করে নেয় কৃষি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

অন্যদিকে, উপজেলা কৃষি অফিসের সাথে কম্বাইন্ড হারভেস্টার সহ কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রেতার সহিত চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ক্রয়কৃত যন্ত্রপাতি কমপক্ষে ৩ বছরের মধ্যে হস্তান্তরযোগ্য নয়। কিন্তু সরকারের ভর্তুকির টাকায় কেনা জেলার বেশীর ভাগ কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও পাওয়ার রিপার বেশী লাভে গোপনে বিক্রি হয়েছে বিভিন্ন জেলায়। চুক্তির শর্ত মোতাবেক ভূর্তকীতে পাওয়া কৃষি যন্ত্রপাতি বিক্রয় করলে ভূর্তকীর টাকা সরকারী কোষাগারে জমা করার বিধান থাকলেও এক্ষেত্রে সরকারী কোষাগারে টাকা জমা করা হয় নাই।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, এসব যন্ত্রপাতি বিক্রিতে কৃষি অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত আছেন বলে প্রদানকৃত যন্ত্রপাতি গুলো জেলায় নাই অন্যত্র বিক্রি হয়েছে, এটা জানার পরও কৃষি অফিসের মাসিক, ত্রৈমাসিক রিপোটের তথ্যে যন্ত্রপাতি গুলো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামে দেখানো হচ্ছে।

অভিযোগের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে সাদুল্লাপুর, সাঘাটা, পলাশবাড়ী ও ফুলছড়ি সহ জেলার ৭ উপজেলা কৃষি অফিস হতে প্রাপ্ত ও বিশ্বস্ত সুত্রে প্রাপ্ত ভর্তুকির তালিকা নিয়ে সরেজমিনে সাঘাটা উপজেলার কামালের পাড়া ইউনিয়নের কৈচড়া গ্রামের মোঃ হামিদুল ইসলাম ও বোনারপাড়ার পূর্ব শিমুলতাইড় গ্রামের মোঃ আইয়ুব আলীর বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায় ভূর্তকীতে পাওয়া ‘পাওয়ার রিপার’ ২টি নাই। পাওয়ার রিপার ২টি কোথায় জানতে চাওয়া হলে নষ্ট হয়েছে বলে প্রতিবেদককে জানালেও কোথায় মেরামত করতে দিয়েছেন তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেন নাই ওই দুই ব্যক্তি। একই উপজেলার দক্ষিণ যোগীপাড়া গ্রামের মোঃ জিল্লুর রহমান সরকার ও সাঘাটা গ্রামের মোঃ তাজুল ইসলাম এর বাড়ীতে গিয়ে ভূর্তকীর আওতায় পাওয়া উচ্চ মূল্যের কম্বাইন্ড হারভেস্টার ২টির দেখা মেলে নাই। একজন বলেছেন টাঙ্গাইলে আছে অন্যজন বলেছেন পীরগঞ্জে আছে। হারভেস্টার রহস্য উদঘাটনে ওই ২টি এলাকার একাধিক সাধারণ মানুষজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা যে ধান কাটার মেশিন (কম্বাইন্ড হারভেস্টার) পেয়েছে আমরা তা জানি না। পেয়ে থাকলে বাড়ীতে আনতো, আমরা তা অবশ্যই দেখতে পেতাম।

ফুলছড়ি উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভর্তুকির আওতায় ৫টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার প্রদান করা হয়।

হারভেস্টার গুলোর বিষয়ে জানতে উদাখালী ইউনিয়নের কাঠুর গ্রামের মোঃ আবুল বাশারের ছেলে মোঃ মনির উদ্দিন ও মৃত হায়দার আলীর ছেলে মোঃ নুর আলম সাথে মুঠোফোনে কথা হলে মনির উদ্দিনের ভাষ্যমতে তার মেশিনটি বর্তমানে বিরামপুরে আছে, অন্যজন বলেন ঠাকুরগাঁও-এ আছে। একই ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের মোঃ আব্দুর ছালামের ছেলে মোঃ রফিকুল ইসলামের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

সাদুল্লাপুর উপজেলার বৈষ্ণমদাস রসুলপুর গ্রামের মোঃ মজিবর রহমানের ২ ছেলে মোঃ আব্দুর রশিদ ও মোঃ ওয়াহেদ আলী এবং ছান্দিয়াপুর গ্রামের মোঃ সাদা মিয়ার ছেলে মোঃ আবু হাসান মিয়া ২০২৩ সালের ৭ই মে ভর্তুকিতে ১টি করে পাওয়ার থ্রেসার মেশিন ক্রয় করেন। আমন ধান কাটা মারাইয়ের ভরা মৌসুমে মেশিন গুলোর বর্তমান অবস্থা জানতে মুঠোফেনে ওই তিন ব্যক্তির সাথে কথা হলে তারা নির্দিষ্ট করে কিছু না বলে শুধুমাত্র বলেছেন বগুড়ায় আছে, একজন বলেছেন ময়মনসিংহে আছে অন্যজন বলেছেন দিনাজপুরে আছে।

ফরিদপুর ইউনিয়নের আলদাদপুর গ্রামের তমিজ উদ্দিন মন্ডলের ছেলে মোঃ ওয়াহেদ মন্ডলকে চলতি বছরের ২রা মে ভর্তুকিতে একটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার প্রদান করেন সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি অফিস। হারভেস্টারটির বিষয়ে ওয়াহেদ মন্ডলের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মেশিনটি গোবিন্দগঞ্জে আছে।

পলাশবাড়ী উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের আমলাগাছী গ্রামের আব্দুস ছাত্তার মন্ডলের ছেলে মোঃ শামছুল আলম মন্ডলের সাথে কথা বলে জানা যায় তার কম্বাইন্ড হারভেস্টারটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আছে।

মহদীপুর ইউনিয়নের পূর্বগোপালপুর গ্রামের মোঃ সাজেদুর রহমানের ছেলে মোঃ শওকত আকবর আজম এর কম্বাইন্ড হারভেস্টারটি তার বোনের বাড়ীতে আছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের দিঘলকান্দি ফলিয়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুছ গাছুর ছেলে মোঃ রব্বানী গাছুর কম্বাইন্ড হারভেস্টারটির খোঁজ জানতে একাধিকবার মুঠোফোনে রিং দেওয়া হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

উল্লেখিত এলাকার সাধারণ মানুষজন ও কৃষকদের সাথে কথা বলে এবং অনুসন্ধানে যে চিত্র উঠে এসেছে তাতে প্রতিয়মান হয় যে, কৃষকদের সুবিধার্থে গৃহিত প্রকল্পটি কৃষি অফিসের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, কর্মচারীদের কারণে লক্ষ ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সফলতার পরিবর্তে ব্যর্থতায় পরিনত হয়েছে। ফলে সুফল বঞ্চিত হয়েছে এলাকার কয়েক লক্ষ কৃষক। বিষয়টি তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সচেতন গাইবান্ধাবাসী।

কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরনে অনিয়ম, বিক্রি এবং অন্য জেলায় স্থানান্তর বিষয় নিয়ে মতামত জানতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, গাইবান্ধার উপ-পরিচালকে শনিবার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© All rights reserved © 2019
কারিগরি সহযোগিতায়: জাগো হোষ্টার বিডি