1. admin@dainikgoyendarchokh.com : goyadmin :
শ্বশুরবাড়িতে নারকীয় হত্যাকাণ্ড: আমাদের সমাজের দায়বদ্ধতা - দৈনিক গোয়েন্দার চোখ
শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ডোমারে চার দফা দাবিতে কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্টস সমিতির মানববন্ধন সরকারি নির্দেশনা যথাযথ ভাবে পালন করছেন না প্রধান শিক্ষক ২৪ মে, তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ সফল করতে নীলফামারী জেলা ছাত্রদলের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত বোয়ালখালীতে ৫০ শয্যার হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ রোগী পঞ্চগড়ে ৩ শিক্ষার্থী ও ১৩ শিক্ষক নিয়ে চলছে মাদরাসা জলঢাকায় এনসিপির কার্যালয় উদ্বোধন দিনাজপুরে লিচুর বাম্পার ফলন হাকিমপুরে পেশাদার চোরের ধারালো ছোরার আঘাতে জখম এক নারী ডোমারে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত-১ সংগীতশিল্পী বিধান দাস ও দোলন জলদাসকে বিনয়বাঁশী শিল্পীগোষ্ঠীর অভিনন্দন

শ্বশুরবাড়িতে নারকীয় হত্যাকাণ্ড: আমাদের সমাজের দায়বদ্ধতা

  • প্রকাশিত: সোমবার, ৩ মার্চ, ২০২৫
  • ৩৬ বার শেয়ার হয়েছে

বাংলাদেশের সমাজে পারিবারিক সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। প্রতিনিয়ত এমন খবর আমরা গণমাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি, যেখানে পারিবারিক কলহ থেকে শুরু করে নারীর প্রতি সহিংসতা ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছাচ্ছে। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় ঘটে যাওয়া একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়ে গেছে। এক জামাই তার শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসে নিজের স্ত্রী ও শ্যালিকাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে পালিয়ে গেছে। এই ঘটনা শুধু একটি পরিবারকে বিপর্যস্ত করেনি, বরং আমাদের সমাজের গভীর সমস্যাগুলোর দিকে ইঙ্গিত করেছে।

এটি একক কোনো ঘটনা নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পারিবারিক সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ২০২৩ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি মাসে গড়ে ১০-১২টি পারিবারিক সহিংসতার মামলা তাদের নজরে আসে। ২০২২ সালে নারায়ণগঞ্জে এক স্বামী তার স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেন, কারণ সে তার স্বামীর পরকীয়ার প্রতিবাদ করেছিল। ২০২১ সালে গাজীপুরে এক ব্যক্তি যৌতুকের দাবিতে তার স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। ২০১৯ সালে চট্টগ্রামের এক গৃহবধূ তার স্বামীর অব্যাহত নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।

এ ধরনের ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানটি কতটা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে।

ধজনগর গ্রামের এই ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, নিহত জ্যোতি আক্তারের সঙ্গে তার স্বামী আমীর হোসেনের সম্পর্ক ভালো ছিল না। শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসে সে কিভাবে এমন নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটালো, তা অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। স্থানীয়রা জানায়, ভোররাতে যখন সবাই সাহরি খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন, তখনই এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটে। প্রশ্ন হচ্ছে, কিসের এত ক্ষোভ, যা তাকে স্ত্রী ও শ্যালিকাকে খুন করতে বাধ্য করলো? এটি কি মানসিক অসুস্থতা, নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড? পুলিশের তদন্তের আগেই স্থানীয়দের অনুমান, পারিবারিক কলহই এই হত্যার মূল কারণ। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্কের টানাপোড়েন ধীরে ধীরে সহিংসতার দিকে মোড় নেয়। নারী নির্যাতন, পারিবারিক অত্যাচার, মানসিক অবসাদ, এবং রাগের বশবর্তী হয়ে একে অপরকে আঘাত করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই ধরনের পারিবারিক হত্যাকাণ্ড শুধু একটি পরিবারকে ধ্বংস করে না, বরং সমাজে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে। নারীর নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি, পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে পড়া, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি এসবের মধ্যে অন্যতম। নারীরা নিজেদের বাড়িতেই নিরাপদ নয়, এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে সমাজে ভীতির সৃষ্টি হয়। পারিবারিক মূল্যবোধ ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে, যার ফলে সম্পর্কের মধ্যে আস্থা ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। পারিবারিক সহিংসতা ও হত্যার ঘটনায় শিশু এবং অন্যান্য স্বজনদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। যদি অপরাধীরা শাস্তি না পায়, তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ আরও বাড়বে।

আমাদের দেশে পারিবারিক সহিংসতা ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বেশ কিছু আইন রয়েছে। ২০১০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপরাধীরা বিচার থেকে রেহাই পায়। মামালা নিষ্পত্তির ধীরগতি, সঠিক তদন্তের অভাব এবং সচেতনতার অভাব এসবই প্রধান কারণ। অধিকাংশ মামলার রায় পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়, ফলে ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার পায় না। অনেক ক্ষেত্রেই তদন্তে গাফিলতি থাকে, যার কারণে অপরাধী শাস্তি এড়াতে সক্ষম হয়। অনেক নারী নির্যাতিত হলেও তারা আইনি সহায়তা নিতে ভয় পান বা সামাজিক কারণে নীরব থাকেন।

এই ধরনের নির্মম হত্যাকাণ্ড রোধ করতে হলে আমাদের সমাজ, পরিবার, প্রশাসন এবং বিচার ব্যবস্থাকে একযোগে কাজ করতে হবে। দ্রুত তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। পারিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে যাতে পরিবারে ছোটখাটো দ্বন্দ্ব ভয়াবহ পরিণতির দিকে না যায়। মানসিক অবসাদ, রাগ নিয়ন্ত্রণ, দাম্পত্য কলহ মিটমাটের জন্য পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং সেন্টার থাকা জরুরি। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে এবং স্কুল, কলেজ ও কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

আমরা কি এক এমন সমাজে বাস করছি, যেখানে পারিবারিক সম্পর্কে এতটাই অবিশ্বাস জন্মেছে যে মানুষ নিজের পরিবারের সদস্যদেরই খুন করছে? কসবার এই হত্যাকাণ্ড আমাদের চোখ খুলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এ ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে, সে জন্য আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে, পারিবারিক মূল্যবোধ ধরে রাখতে হবে এবং সমাজে ন্যায়বিচারের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

পরিবার মানেই নিরাপত্তার জায়গা, কিন্তু যদি পরিবারেই নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে সমাজের ভিত্তিই নড়বড়ে হয়ে যায়। কসবার এই হত্যাকাণ্ডকে যেন আমরা আরেকটি সংখ্যা হিসেবে দেখে এড়িয়ে না যাই। বরং এটিকে শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করি এবং পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে সক্রিয় হই। নাহলে হয়তো একদিন আমাদের আশেপাশেরই কোনো পরিবার একই ভয়াবহ পরিণতির শিকার হবে।

লেখক:
এম এইচ মুন্না
প্রধান সম্পাদক, দৈনিক গণতদন্ত

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© All rights reserved © 2019
কারিগরি সহযোগিতায়: জাগো হোষ্টার বিডি