বিপ্লব দাস, চট্টগ্রাম বিশেষ প্রতিনিধি-ঃ বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যার হাসপাতালে ভর্তি থাকছে ১০০ রোগী। প্রতিদিন শয্যার কয়েক গুণ রোগী ভর্তি হওয়ায় মেঝে ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে তাদের। এভাবে চিকিৎসা নিতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগীরা। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে শয্যা সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। শয্যা না পেয়ে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। শয্যা সংকটের পাশাপাশি রয়েছে নার্স ও মিডওয়াইফের সংকট।
৩০ জন নার্সের জায়গায় দায়িত্ব পালন করছেন ২৩ জন। হাসপাতালে ১০ জন মিডওয়াইফের জায়গায় কাজ করছেন ৪জন। এছাড়া স্যাকমো ও ফার্মাসিস্ট মোট পদের এক চতুর্থাংশ পদায়িত আছে।
গ্রীস্মের প্রচন্ড দাবদাহে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকছে ধারণ ক্ষমতার উর্ধ্বে রোগী। ইতোমধ্যে স্থানীয় জনগণ দাবি তুলেছেন হাসপাতালটি ৫০ হতে ১০০ শয্যার রূপান্তর করার।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে ডিসেম্বর এর মাঝামাঝি বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা এ যোগদান করেন ডা. জাফরিন জাহেদ (জিতি)। মা ও শিশু বান্ধব হাসপাতাল হিসেবে হাসপাতালটিকে গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
তিনি জানায়, লেবার রুম পৃথকীকরণের মাধ্যমে লেবার ইউনিট তৈরি, ল্যাবরেটরি সার্ভিস এর মান উন্নতকরণ, ওটি রুমে উন্নত অ্যানেসথেসিয়া মেশিন সেট আপ, রক্ত পরিসঞ্চালন এর ব্যবস্থা, ফ্যাসিলিটি ডেলিভারি বাড়িয়ে মাতৃমৃত্যু কমানোর জন্য ডেলিভারী রোগীদের প্রসব পরবর্তী ১ মাসের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদানের ব্যবস্থা করেন। বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আগে কখনো আল্ট্রাসনোগ্রাফী মেশিন ছিলো না। উনি নিজ উদ্যোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে আল্ট্রাসনোগ্রাফী মেশিন আনার সু-ব্যবস্থা করেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাফরিন জাহেদ জিতি'র সাথে কথা বললে তিনি জানান- উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে সনোলজিস্ট পদ নাই, মেশিন চালু করতে মেডিকেল অফিসারদের মোটিভেট করেন। আলোচনা করেন কয়েক দফা, চালু করলে হবে না, মোটামুটি ভরসা করা যায় এরকম রিপোর্ট দিতে হবে। এটা যেহেতু অতিরিক্ত দায়িত্ব, কোন ভাতা নেই, প্রাপ্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়। এটা আয়োজন করা আমাদের জন্য সহজ ছিলো না। কয়েকজন মেডিকেল অফিসার এর ঐকান্তিক চেষ্টায় তাদের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করে আমরা অবশেষে আল্ট্রাসনোগ্রাফী চালু করি। যেখানে একটা রোগী বাইরে পরীক্ষা করতে প্রায় ১০০০-১২০০ টাকা খরচ হয় সে প্রেক্ষিতে নামমাত্র মূল্যে সরকারি হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাফী হচ্ছে এখন বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। যে কোন নতুন কাজ এর প্রচারণা হয়ে গেলে স্বাভাবিক ভাবে রোগীর চাপ বেড়ে যায়। তিনি আরো জানান- ৫০ শয্যার হাসপাতালটি ১০০ শয্যা করলে রোগীদের সেবার মান বাড়বে। ১ দিনে অন্ত:বিভাগ বহি:বিভাগ মিলে অফিস সময়ে ৮-১০ টার বেশি আল্ট্রাসনোগ্রাফী করা সম্ভব হয় না। দিনের সিরিয়াল দিনে নেয়া হয়। যারা আগে আসবেন তাদের সিরিয়াল আগে। তাই রোগীরা অনেক সময় সকাল ৫ টা থেকে লাইন ধরে থাকে যদিও সিরিয়াল নেয়ার সময় ৯টা হতে ১০ টা। বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনামূল্যে সপ্তাহের ৬ দিনই চালু হয়েছে সিজারিয়ান অপারেশন। এছাড়া ২৪ ঘন্টা নরমাল ডেলিভারি ব্যবস্থা রয়েছে।
নতুন পদায়িত এ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাফরিন জাহেদ জিতি আসার পর থেকেই হাসপাতালটির স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধিকরণে কাজ করে যাচ্ছেন। সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্বুদ্ধ করে টিমওয়ার্কের মাধ্যমে তিনি উপজেলার স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে উদ্যোমী হয়েছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুর রহিম
০১৭৯৬৫১৭৮৭৩,০১৭১২৮৮৪৪০৯
goyendarchokh6@gmail.com