আজমির রহমান রিশাদ, ডোমার প্রতিনিধি : সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে, নীলফামারী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিনের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও কারামুক্তি উপলক্ষ্যে নীলফামারীর ডোমারে গণসংবর্ধনা প্রদান ও জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (১৭ই মে) বিকালে ডোমার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা ও পৌর বিএনপির আয়োজনে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ রেয়াজুল ইসলাম কালুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মোঃ আখতারুজ্জামান সুমন ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোজাফফর আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত গণসংবর্ধনা ও জনসমাবেশে সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জিয়া পরিবারের অন্যতম সদস্য প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন।
এসময় তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা দিয়েছে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে সকলের অংশগ্রহণে গণতান্ত্রিক পন্থায় জাতীয় নির্বাচন হবে। বিএনপি সহ অন্যান্য দল নির্বাচনের রোডম্যাপ চায়। দুর্ভাগ্য, আমরা এখন পর্যন্ত রোডম্যাপ পাইনি। আমরা সন্দিহান- সরকারের কিছু কিছু উপদেষ্টারা বিএনপিকে দোষারোপ করার চেষ্টা করছে, হয়তোবা ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করতে চায়। তাদের অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ যে, জনগণের রায় ছাড়া দেশ পরিচালনা করার অধিকার কারো নাই।
প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ তার শাসনামলে বৈষম্যমূলক আচরণের মাধ্যমে সাম্য কেড়ে নিয়েছে, মানবিক মর্যাদা ও অধিকার হরণ করেছে। এছাড়া দেশের মানুষের সামাজিক সুবিচার থেকে বঞ্চিত করেছে। বিএনপি সহ সকল বিরোধী দলের দীর্ঘ ১৬ বছরের আন্দোলনে আমরা শতশত প্রাণ হারিয়েছি। আমাদের অনেক নেতা-কর্মী গুমের শিকার হয়েছেন। সবশেষে ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট রেজিমের বিদায় দিয়েছে ছাত্র-জনতা।
তিনি আরও বলেন, ২৪'র গণঅভ্যুত্থানে এদেশের নিরস্ত্র ছাত্র-জনতা সরকারি বাহিনীর আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও ট্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে অকাতরে জীবন দিয়েছে। তাদের আত্মাহুতির বিনিময়ে আজ বাকস্বাধীনতা এসেছে। এদেশে ১৯৭২-৭৫ সালে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল। সেসময় বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করা হয়। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেন। তিনি সকল দলের সমানভাবে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।
প্রকৌশলী তুহিন বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে বিএনপি গঠন হওয়ার পর ১৯৮১-৯১ সাল পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া ডোমার সহ দেশের প্রতিটি উপজেলায় ঘুরে ঘুরে বিএনপিকে সুসংগঠিত করেছেন। তিনি নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিতে গিয়েছে; তবুও কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি। ২০১৪, ২০১৮ কিংবা ২০২৪-এ তিনি আপোষ করতে পারতেন, কিন্তু এদেশের জনগণের কথা ভেবে আপোষ করেননি, জেলে গিয়েছেন।
সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী সবসময় দ্বিচারিতা করে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর দেশবিরোধী আচরণের কথা সবাই জানে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে থাকলেও ১৯৮৬ সালে তারা আওয়ামী লীগের সাথে এরশাদের পাতানো নির্বাচনে গিয়েছিল। এদেশের জনগণের সাথে তারা বারেবারে প্রতারণা করেছে। এখন বিভিন্নভাবে বিএনপির নামে বদনাম রটছে। আমাদের সকলকে সাবধান হতে হবে।
ডোমার-ডিমলার উন্নয়নের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, আমি দেশে আসার পর প্রকৌশলী মহলের সাথে কথা বলেছি। তারা আমার নীলফামারী জেলায় কাজ করতে আগ্রহী। অতিসত্বর ডোমার ও ডিমলা উপজেলার অসম্পূর্ণ কাজগুলো আমরা শুরু করবো। এই এলাকার তথ্যপ্রযুক্তির সাথে যুক্ত দক্ষ কর্মীদের নিয়ে কাজ করতে চাই। ডোমারে একটি টেকনিক্যাল কলেজ নির্মাণের প্রচেষ্টা রয়েছে আমাদের। মানবসম্পদ উন্নয়ন সহ ডোমার ও ডিমলা উপজেলাকে নিরক্ষর মুক্ত করা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। ডোমারে এক লাখ ২১ হাজার পরিবার রয়েছে। আমি চাই প্রত্যেক পরিবার থেকে যেন অন্ততঃ একজন স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে পারে। সকলকে বলতে চাই, কোনোপ্রকার বেআইনি কাজ করা যাবেনা। অন্যায় করলে অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে। আমরা মাদকমুক্ত এলাকা গড়ে তুলতে চাই।
পরিশেষে তিনি বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে মাত্র চারবছর দেশ পরিচালনা করার সুযোগ পেয়েছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। সেসময় দেশের কল্যাণে করা তার সকল কাজের জন্য তার মৃত্যুবরণের পরও তিনি অমর হয়ে রয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর পর বেগম খালেদা জিয়া বিএনপি ও দেশকে এগিয়ে নিয়েছেন। কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি। দেশের জনগণের কথা চিন্তা করে কখনো দেশ ছেড়ে যাননি। এখন তাদের পুত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাসিত জীবনে ভাইকে হারিয়ে, মায়ের কারাভোগ সহ্য করেও কখনো হাল ছাড়েননি। তার নেতৃত্বে বিএনপি আরও বেশি সুসংগঠিত হয়েছে। বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীও তার সংস্পর্শে এসেছে। এখন যেই সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, সেটি ২০২৩ সালের জুন মাসেই বিএনপির রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের ৩১ দফায় উল্লেখ করেছেন তারেক রহমান।
উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ বিন আমিন সুমনের উপস্থাপনায় এসময় নীলফামারী জেলা বিএনপির সভাপতি আ খ ম আলমগীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মোঃ জহুরুল আলম, সহ-সভাপতি আবু সাদেক হোসেন চৌধুরী লুলু, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রায়হানুল হক প্রধান ইউসুফ, ডোমার পৌর বিএনপির সভাপতি আনিছুর রহমান আনু প্রমুখ সহ উপজেলা ও পৌর বিএনপি এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, সকালে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করে সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির পথসভা শেষে নীলফামারী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে জেলা বিএনপির গণসংবর্ধনা ও জনসমাবেশে যোগ দেন তিনি।
জানা যায়, ফখরুদ্দিন-মঈন উদ্দিন সরকারের আমলে দুদকের করা দুই মামলায় তাকে কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করা হয়। দীর্ঘ ১৮ বছর প্রবাসে নির্বাসিত জীবন পার করে চলতি বছরের গত ২২শে এপ্রিল দেশে ফেরেন প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন। এরপর আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তার বিরুদ্ধে করা মামলা লড়তে আদালতে আত্মসমর্পণ করলে ২৯শে এপ্রিল কারাগারে যেতে হয় তাকে। পরে, হাইকোর্ট বিভাগের দেওয়া অন্তর্বর্তী জামিনে গত ৮ই মে তিনি কারামুক্ত হন।
উল্লেখ্য, প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন ডোমার উপজেলার গোমনাতী ইউনিয়নের অধ্যাপক মোঃ রফিকুল ইসলামের পুত্র। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের খালাতো ভাই। নীলফামারী-১ আসন থেকে ১৯৯৬ সালে বিএনপির মনোনয়নে একবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমানে বিএনপির নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুর রহিম
০১৭৯৬৫১৭৮৭৩,০১৭১২৮৮৪৪০৯
goyendarchokh6@gmail.com